স্পিড আর পারফর্মেন্স একসাথে? Windows 11 ইনস্টল করুন আপনার এক্সটার্নাল SSD-তে

 

বর্তমান সময়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে স্পিড এবং পারফর্মেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্লো কম্পিউটার বিরক্তির কারণ হতে পারে এবং কাজের গতি কমিয়ে দিতে পারে। অনেকেই তাদের পুরনো ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের পারফর্মেন্স নিয়ে চিন্তিত, আবার কেউ কেউ হয়তো চান Windows 11-এর নতুন ফিচারগুলো পরখ করে দেখতে, কিন্তু নিজেদের মূল সিস্টেমে কোনো পরিবর্তন আনতে চান না। এই সব সমস্যার এক দারুণ সমাধান হতে পারে আপনার এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করা। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, এটা সম্ভব এবং এর অনেক সুবিধাও রয়েছে।

এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কীভাবে আপনি আপনার এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে কীভাবে অসাধারণ স্পিড ও পোর্টেবিলিটির সুবিধা পেতে পারেন।

কেন এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করবেন?

এক্সটার্নাল সলিড স্টেট ড্রাইভে (SSD) উইন্ডোজ ১১ ইনস্টল করার পেছনে একাধিক যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে:

1.    পোর্টেবিলিটি (Portability): আপনার সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম এবং ফাইলপত্র পকেটে নিয়ে ঘোরার স্বাধীনতা। যেকোনো সাপোর্টেড কম্পিউটারে শুধু এক্সটার্নাল SSD প্লাগ ইন করেই নিজের উইন্ডোজ পরিবেশে কাজ করতে পারবেন।

2.    অসাধারণ স্পিড: পুরনো সিস্টেমে যদি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ (HDD) থাকে, তাহলে এক্সটার্নাল SSD-তে উইন্ডোজ চালালে বুট টাইম, অ্যাপ্লিকেশন লোডিং এবং ফাইল ট্রান্সফারে অভাবনীয় গতি পাবেন।

3.    মূল সিস্টেম অক্ষত রাখা: নতুন অপারেটিং সিস্টেম টেস্ট করার জন্য এটি একটি নিরাপদ উপায়। আপনার কম্পিউটারের মূল উইন্ডোজ ইনস্টলেশনের কোনো ক্ষতি না করেই আপনি Windows 11 ব্যবহার করতে পারবেন।

4.    কম খরচে আপগ্রেড: পুরনো ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে ইন্টারনাল SSD লাগানোর সুযোগ না থাকলে বা খরচ বেশি মনে হলে, এক্সটার্নাল SSD একটি সাশ্রয়ী বিকল্প হতে পারে।

5.    ডেটা নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি: আপনার ব্যক্তিগত ও কাজের ডেটা সম্পূর্ণ আলাদা একটি ড্রাইভে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

প্রয়োজনীয় উপকরণ (Prerequisites):

এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করার আগে কিছু জিনিস আপনার হাতের কাছে রাখতে হবে:

1.    একটি এক্সটার্নাল SSD: কমপক্ষে 64GB স্পেসের SSD প্রয়োজন, তবে 128GB বা 256GB হলে ভালো পারফর্মেন্স এবং পর্যাপ্ত স্টোরেজ পাওয়া যাবে। খেয়াল রাখবেন SSD-টি যেন USB 3.0 বা তার চেয়ে ভালো (যেমন USB 3.1, USB 3.2 বা Thunderbolt) ইন্টারফেস সাপোর্ট করে। NVMe SSD একটি USB এনক্লোজারে ব্যবহার করলে সেরা পারফর্মেন্স পাওয়া যায়।

2.    Windows 11 ISO ফাইল: মাইক্রোসফটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে Windows 11-এর লেটেস্ট ISO ফাইল ডাউনলোড করে নিন।

3.    Rufus বা WinToUSB সফটওয়্যার: এই ধরনের টুল ব্যবহার করে বুটেবল এক্সটার্নাল SSD তৈরি করা সহজ হয়। Rufus (রুফুস) একটি জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য অপশন।

4.    একটি সচল উইন্ডোজ কম্পিউটার: এই কম্পিউটারটি ব্যবহার করেই আপনি এক্সটার্নাল SSD-তে উইন্ডোজ ইনস্টলেশনের মিডিয়া তৈরি করবেন।

5.    কম্পিউটারের BIOS/UEFI অ্যাক্সেস: এক্সটার্নাল SSD থেকে বুট করার জন্য BIOS/UEFI সেটিংস পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।

এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করার পদ্ধতি (Rufus ব্যবহার করে):

আমরা এখানে Rufus সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে বর্ণনা করবো। Rufus তার "Windows To Go" ফিচারের মাধ্যমে এই কাজটি খুব সহজে করতে পারে।

ধাপ ১: Rufus এবং Windows 11 ISO ডাউনলোড করুন

·         প্রথমে, Rufus-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (rufus.ie) থেকে লেটেস্ট পোর্টেবল ভার্সনটি ডাউনলোড করুন।

·         Microsoft-এর ওয়েবসাইট থেকে Windows 11 Disk Image (ISO) ডাউনলোড করুন।

ধাপ ২: এক্সটার্নাল SSD কানেক্ট করুন

·         আপনার এক্সটার্নাল SSD-টি কম্পিউটারের একটি দ্রুতগতির USB পোর্টে (সাধারণত নীল রঙের USB 3.0 পোর্ট) কানেক্ট করুন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে SSD-তে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নেই, কারণ এই প্রক্রিয়ায় SSD ফরম্যাট হয়ে যাবে।

ধাপ ৩: Rufus চালু করুন এবং সেটিংস কনফিগার করুন

·         ডাউনলোড করা Rufus অ্যাপ্লিকেশনটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে চালু করুন (রাইট ক্লিক করে "Run as administrator" সিলেক্ট করুন)।

·         Device: ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে আপনার কানেক্ট করা এক্সটার্নাল SSD সিলেক্ট করুন। সঠিকভাবে সিলেক্ট করেছেন কিনা, তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

·         Boot selection: "Disk or ISO image (Please select)" অপশনটি সিলেক্ট করা আছে কিনা দেখুন, এবং ডান পাশের "SELECT" বাটনে ক্লিক করে ডাউনলোড করা Windows 11 ISO ফাইলটি নির্বাচন করুন।

·         Image option: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে "Windows To Go" অপশনটি সিলেক্ট করুন। এটি না করলে স্ট্যান্ডার্ড বুটেবল ইউএসবি তৈরি হবে, যা সরাসরি এক্সটার্নাল ড্রাইভে উইন্ডোজ ইনস্টল করবে না।

·         Partition scheme: আপনার টার্গেট কম্পিউটার যদি আধুনিক হয় (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই UEFI সাপোর্ট করে), তাহলে "GPT" সিলেক্ট করুন। পুরনো সিস্টেমের জন্য "MBR" সিলেক্ট করতে পারেন। তবে Windows 11 এর জন্য GPT এবং UEFI আদর্শ।

·         Target system: এটি সাধারণত "Partition scheme" এর উপর ভিত্তি করে অটোমেটিকভাবে "UEFI (non CSM)" সিলেক্ট হয়ে যাবে (যদি GPT সিলেক্ট করেন)।

·         Volume label: আপনার এক্সটার্নাল SSD-এর জন্য একটি নাম দিন, যেমন "Win11_External"।

·         File system: "NTFS" সিলেক্ট করা থাকবে, এটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।

·         Cluster size: ডিফল্ট ভ্যালুতেই রাখুন।

ধাপ ৪: Windows User Experience কাস্টমাইজেশন (ঐচ্ছিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ)

·         "START" বাটনে ক্লিক করার পর একটি নতুন উইন্ডো ("Windows User Experience") আসতে পারে। এখানে আপনি কিছু কাস্টমাইজেশন করতে পারেন:

o    Remove requirement for 4GB+ RAM, Secure Boot and TPM 2.0: আপনার টার্গেট কম্পিউটারে যদি এই হার্ডওয়্যারগুলো না থাকে, তাহলে এই অপশনটি টিক দিয়ে দিন। এটি Windows 11 ইনস্টলেশনের হার্ডওয়্যার সীমাবদ্ধতা বাইপাস করতে সাহায্য করবে।

o    Create a local account with username: আপনি চাইলে একটি লোকাল অ্যাকাউন্টের নাম আগে থেকেই সেট করে দিতে পারেন।

o    অন্যান্য অপশনগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সিলেক্ট বা ডিসিলেক্ট করতে পারেন।

·         সবকিছু ঠিক থাকলে "OK" ক্লিক করুন।

ধাপ ৫: প্রক্রিয়া শুরু করুন এবং অপেক্ষা করুন

·         Rufus একটি সতর্কবার্তা দেখাবে যে SSD-এর সমস্ত ডেটা মুছে যাবে। "OK" ক্লিক করে কনফার্ম করুন।

·         এবার Rufus এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 "To Go" ভার্সন তৈরি করা শুরু করবে। এই প্রক্রিয়াটি বেশ সময় নিতে পারে (৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার বেশি), যা আপনার SSD-এর গতি এবং কম্পিউটারের পারফর্মেন্সের উপর নির্ভর করবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।

·         প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে Rufus-এ "READY" স্ট্যাটাস দেখাবে। তখন "CLOSE" বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৬: এক্সটার্নাল SSD থেকে বুট করুন

·         এবার আপনার এক্সটার্নাল SSD-টি উইন্ডোজ ১১ সহ ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। যে কম্পিউটারে এটি ব্যবহার করতে চান, সেটি রিস্টার্ট করুন।

·         রিস্টার্ট হওয়ার সময় নির্দিষ্ট কী (সাধারণত F2, F10, F12, DEL বা ESC – মাদারবোর্ড বা ল্যাপটপ প্রস্তুতকারকের উপর নির্ভরশীল) চেপে BIOS/UEFI সেটাপে প্রবেশ করুন।

·         বুট মেনুতে গিয়ে বুট অর্ডার পরিবর্তন করে আপনার এক্সটার্নাল SSD-কে প্রথম বুট ডিভাইস হিসেবে সিলেক্ট করুন।

·         সেটিংস সেভ করে এক্সিট করুন।

ধাপ ৭: Windows 11 সেটআপ সম্পন্ন করুন

·         কম্পিউটার এবার এক্সটার্নাল SSD থেকে বুট হবে এবং Windows 11-এর প্রাথমিক সেটআপ প্রক্রিয়া (OOBE - Out of Box Experience) শুরু হবে। এখানে আপনাকে দেশ, ভাষা, কীবোর্ড লেআউট সিলেক্ট করতে হবে এবং নেটওয়ার্কে কানেক্ট করতে হতে পারে।

·         যদি Rufus-এ লোকাল অ্যাকাউন্ট তৈরি করার অপশন সিলেক্ট না করে থাকেন, তাহলে এখানে আপনাকে Microsoft অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করতে বা একটি নতুন লোকাল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে বলা হবে।

·         সেটআপ সম্পন্ন হলে, আপনি আপনার পোর্টেবল Windows 11 ডেস্কটপে পৌঁছে যাবেন!

পারফর্মেন্স এবং ব্যবহারের অভিজ্ঞতা:

USB 3.0 বা তার চেয়ে ভালো পোর্টে কানেক্ট করা একটি ভালো মানের এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 চালানোর অভিজ্ঞতা বেশ মসৃণ হতে পারে। এটি অবশ্যই ইন্টারনাল NVMe SSD-এর মতো দ্রুত হবে না, তবে একটি পুরনো ইন্টারনাল HDD-এর তুলনায় অনেক গুণ ভালো পারফর্মেন্স দেবে।

·         বুট টাইম: উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

·         অ্যাপ্লিকেশন লোডিং: দ্রুত হবে।

·         ফাইল ট্রান্সফার: SSD-এর স্পিড অনুযায়ী ভালো গতি পাওয়া যাবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

·         লাইসেন্স: Windows To Go ফিচারটি মূলত এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আপনার একটি ভ্যালিড Windows লাইসেন্স থাকা উচিত।

·         ড্রাইভার: বিভিন্ন কম্পিউটারে এক্সটার্নাল SSD ব্যবহার করলে কিছু ড্রাইভারের সমস্যা হতে পারে। তবে Windows 11 সাধারণত বেশিরভাগ হার্ডওয়্যারের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রাইভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল করে নেয়।

·         উইন্ডোজ আপডেট: এক্সটার্নাল SSD-তে ইনস্টল করা উইন্ডোজ আপডেট পেতে পারে, তবে বড় ফিচার আপডেট ইনস্টল করার সময় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

·         হাইবারনেশন: Windows To Go সিস্টেমে হাইবারনেশন ডিফল্টভাবে ডিজেবল করা থাকে।

·         BitLocker: আপনি চাইলে BitLocker ব্যবহার করে আপনার এক্সটার্নাল SSD-কে এনক্রিপ্ট করে ডেটার সুরক্ষা বাড়াতে পারেন।

সুবিধা ও অসুবিধা সংক্ষেপে:

সুবিধা:

·         উন্নত পোর্টেবিলিটি।

·         পুরনো পিসিতে নতুন জীবনের সঞ্চার।

·         মূল সিস্টেমকে প্রভাবিত না করে টেস্টিং।

·         ডেটা আইসোলেশন এবং ব্যাকআপের সুবিধা।

অসুবিধা:

·         ইন্টারনাল SSD-এর তুলনায় কিছুটা ধীরগতির হতে পারে (USB ইন্টারফেসের সীমাবদ্ধতার কারণে)।

·         কিছু কম্পিউটারে ড্রাইভারজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

·         লাইসেন্সিং এবং আপডেটের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকতে পারে।

·         দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে SSD কিছুটা গরম হতে পারে।

শেষ কথা:

এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করা একটি চমৎকার উপায় যার মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটিং অভিজ্ঞতাকে আরও গতিশীল এবং পোর্টেবল করে তুলতে পারেন। পুরনো হার্ডওয়্যারকে নতুন জীবন দেওয়া হোক বা নিরাপদে নতুন অপারেটিং সিস্টেম পরখ করা হোক, এই পদ্ধতিটি অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর। সঠিক উপকরণ এবং ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি নিজেই সফলভাবে এই কাজটি করতে পারবেন। তাই, যদি স্পিড আর পারফর্মেন্স দুটোই একসাথে চান, তাহলে এক্সটার্নাল SSD-তে Windows 11 ইনস্টল করার কথা ভেবে দেখতে পারেন!