ডিজিটাল ফরেনসিক্স আধুনিক
প্রযুক্তির এক
গুরুত্বপূর্ণ শাখা
যা
সাইবার
অপরাধ
তদন্তে
অপরিহার্য ভূমিকা
পালন
করে।
এটি
এমন
একটি
বিজ্ঞান, যা
ডিজিটাল ডিভাইস,
নেটওয়ার্ক এবং
ইলেকট্রনিক ডেটার
বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত
করতে
সাহায্য করে।
বর্তমানে, সাইবার
অপরাধের সংখ্যা
বৃদ্ধি
পাওয়ায় ডিজিটাল ফরেনসিক্স বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে
উঠেছে।
ডিজিটাল ফরেনসিক্স কী?
ডিজিটাল ফরেনসিক্স হল
এমন
একটি
পদ্ধতি,
যার
মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস
বা
সিস্টেম থেকে
তথ্য
সংগ্রহ,
বিশ্লেষণ এবং
সংরক্ষণ করা
হয়।
এটি
আইন
প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য
অপরাধীদের শনাক্ত
করার
একটি
কার্যকরী কৌশল।
প্রধানত, কম্পিউটার, মোবাইল
ডিভাইস,
সার্ভার, ক্লাউড
স্টোরেজ, নেটওয়ার্ক এবং
অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের তথ্য
যাচাই-বাছাই করা হয়।
ডিজিটাল ফরেনসিক্সের গুরুত্ব
১.
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ – ডিজিটাল ফরেনসিক্স সাইবার
ক্রাইম
প্রতিরোধ ও
দোষীদের শনাক্ত
করতে
সাহায্য করে।
২.
প্রমাণ সংগ্রহ – ডিজিটাল ফরেনসিক্স পদ্ধতির মাধ্যমে আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ
সংগ্রহ
করা
যায়।
৩.
তথ্য পুনরুদ্ধার – হারিয়ে যাওয়া
বা
মুছে
ফেলা
তথ্য
পুনরুদ্ধার করা
সম্ভব।
৪.
ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ – ডিজিটাল ফরেনসিক্স অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা
পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে।
ডিজিটাল ফরেনসিক্সের প্রকারভেদ
ডিজিটাল ফরেনসিক্স বিভিন্ন ভাগে
বিভক্ত
করা
যায়:
১. কম্পিউটার ফরেনসিক্স
এটি
কম্পিউটার সিস্টেম এবং
স্টোরেজ ডিভাইসের তথ্য
বিশ্লেষণ করে।
হার্ড
ড্রাইভ,
ইউএসবি,
মেমোরি
কার্ড
ইত্যাদি থেকে
তথ্য
পুনরুদ্ধার ও
বিশ্লেষণ করা
হয়।
২. নেটওয়ার্ক ফরেনসিক্স
এটি
নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাইবার
হামলা,
হ্যাকিং ও
ডেটা
চুরির
ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে
সাহায্য করে।
৩. মোবাইল ফরেনসিক্স
মোবাইল
ফোন,
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি থেকে
তথ্য
সংগ্রহ
এবং
বিশ্লেষণ করা
হয়।
এটি
কল
লগ,
মেসেজ,
ইমেইল
ও
অ্যাপ
সংক্রান্ত তদন্তে
ব্যবহৃত হয়।
৪. মালওয়্যার ফরেনসিক্স
এই
শাখাটি
ম্যালওয়্যার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাইবার
অপরাধীদের কর্মকাণ্ড শনাক্ত
করতে
ব্যবহৃত হয়।
৫. ক্লাউড ফরেনসিক্স
ক্লাউড
স্টোরেজ বা
ভার্চুয়াল সার্ভারে সংরক্ষিত ডেটা
বিশ্লেষণ করে
সাইবার
অপরাধ
শনাক্ত
করা
হয়।
ডিজিটাল ফরেনসিক্স প্রক্রিয়া
ডিজিটাল ফরেনসিক্স সাধারণত চারটি
প্রধান
ধাপে
সম্পন্ন হয়:
১. তথ্য সংগ্রহ
প্রাথমিকভাবে, ডিজিটাল ডিভাইস
থেকে
তথ্য
সংগ্রহ
করা
হয়।
এখানে
হার্ড
ড্রাইভ,
সার্ভার, ক্লাউড
স্টোরেজ এবং
নেটওয়ার্ক ট্রাফিক অন্তর্ভুক্ত থাকে।
২. তথ্য সংরক্ষণ
সংগৃহীত তথ্য
অপরিবর্তিত রাখার
জন্য
সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা
হয়,
যাতে
এটি
আদালতে
উপস্থাপনের জন্য
গ্রহণযোগ্য থাকে।
৩. তথ্য বিশ্লেষণ
বিশেষ
সফটওয়্যার ও
কৌশল
ব্যবহার করে
সংগৃহীত তথ্য
বিশ্লেষণ করা
হয়,
যাতে
অপরাধীদের শনাক্ত
করা
যায়।
৪. রিপোর্টিং
বিশ্লেষণের পর
একটি
বিশদ
রিপোর্ট তৈরি
করা
হয়,
যা
আইন
প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যবহার করতে
পারে।
ডিজিটাল ফরেনসিক্সে ব্যবহৃত টুলস
১.
Autopsy – ফ্রি
ও
ওপেন
সোর্স
ফরেনসিক টুল
২.
FTK (Forensic Toolkit) – শক্তিশালী ফরেনসিক সফটওয়্যার ৩.
EnCase – বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় ফরেনসিক টুল
৪.
Wireshark – নেটওয়ার্ক ফরেনসিক্সের জন্য
৫.
XRY – মোবাইল
ফরেনসিক্সের জন্য
সাইবার অপরাধ এবং ডিজিটাল ফরেনসিক্সের ভূমিকা
ডিজিটাল ফরেনসিক্স নিম্নলিখিত সাইবার
অপরাধ
তদন্তে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে:
- হ্যাকিং
ও ডেটা চুরি
- অপরাধমূলক
ইমেইল ও ফিশিং আক্রমণ
- র্যানসমওয়্যার
ও ভাইরাস আক্রমণ
- অবৈধ
আর্থিক লেনদেন
- অনলাইন
প্রতারণা ও পরিচয় চুরি
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ডিজিটাল ফরেনসিক্সের প্রধান
চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে
রয়েছে:
- নতুন
প্রযুক্তি ও এনক্রিপশন মোকাবিলা করা
- বৃহৎ
পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করা
- আইনি
ও নৈতিক সীমাবদ্ধতা মেনে চলা
তবে,
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন
লার্নিং, এবং
ব্লকচেইন প্রযুক্তির সংযোজনের ফলে
ভবিষ্যতে ডিজিটাল ফরেনসিক্স আরও
শক্তিশালী হয়ে
উঠবে।
ডিজিটাল ফরেনসিক্স বর্তমান সময়ের
অপরিহার্য একটি
প্রযুক্তি যা
সাইবার
অপরাধ
দমন
ও
তদন্তে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে।
এটি
আধুনিক
বিচার
ব্যবস্থার একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ
হয়ে
উঠেছে
এবং
ভবিষ্যতে আরও
উন্নত
প্রযুক্তির সংযোজনের মাধ্যমে এটি
আরও
কার্যকরী হয়ে
উঠবে।
সাইবার
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
ডিজিটাল ফরেনসিক্সের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।